বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত দিনাজপুর জেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। এর মধ্যে বিরামপুর উপজেলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এই নিবন্ধে আমরা বিরামপুর ও আশেপাশের এলাকার কিছু প্রধান আকর্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রখুনি কান্ত জমিদারবাড়ী
বিরামপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামে অবস্থিত রখুনি কান্ত জমিদারবাড়ী একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৮শ শতাব্দীতে নির্মিত এই জমিদারবাড়ীটি তার স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের জন্য পরিচিত। এখানে জমিদার পরিবারের বসবাস ও তাদের শাসনামলের নানা নিদর্শন রয়েছে, যা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
রামসাগর দিঘি
দিনাজপুর জেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রামসাগর দিঘি, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয়। রাজা রামনাথ ১৮শ শতাব্দীতে এই দিঘিটি খনন করেন। প্রায় ৪৩৭,৪৯২ বর্গমিটার আয়তনের এই দিঘিটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিনোদনের জন্য পরিচিত। এখানে সাঁতার কাটা, নৌকাভ্রমণ এবং পিকনিকের ব্যবস্থা রয়েছে, যা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান।
কান্তজীর মন্দির
দিনাজপুর জেলার কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত কান্তজীর মন্দির, যা নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। ১৮শ শতাব্দীতে মহারাজা প্রাণনাথ এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং তার পুত্র মহারাজা রামনাথ ১৭৫২ সালে এটি সম্পন্ন করেন। মন্দিরটির বাইরের দেয়ালে মহাভারত, রামায়ণ ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীর টেরাকোটা চিত্র রয়েছে, যা স্থাপত্যশৈলীর অনন্য উদাহরণ।
নয়াবাদ মসজিদ
১৭৯৩ সালে নির্মিত নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের শাসনামলে নির্মিত এই মসজিদটির টেরাকোটা কারুকার্য মুগ্ধকর। স্থানীয়দের মতে, কান্তজীর মন্দির নির্মাণের সময় পশ্চিমা স্থপতিরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাস পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান প্রায় ৫১৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ২০১০ সালে এটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্যানের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শালবন, আশুরার বিল এবং কাঠের সেতু, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। এখানে পিকনিক, নৌকাভ্রমণ এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে।
দিনাজপুর রাজবাড়ী
দিনাজপুর শহরের রাজারামপুর গ্রামে অবস্থিত দিনাজপুর রাজবাড়ী একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। ১৮শ শতাব্দীতে নির্মিত এই রাজবাড়ীটি তার স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে কুমার মহল, আয়না মহল, রানী মহলসহ বিভিন্ন স্থাপনা, যা অতীতের জমিদার শাসনের নিদর্শন বহন করে। ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলীর প্রতি আগ্রহী পর্যটকদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।
সিংড়া জাতীয় উদ্যান
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সিংড়া জাতীয় উদ্যান প্রায় ৭৫৬ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ২০১০ সালে এটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্যানের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শালবন, নদী এবং সেতু, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। এখানে পিকনিক, ট্রেকিং এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত স্বপ্নপুরী পিকনিক