বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গাইবান্ধা জেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই জেলা বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান ও দর্শনীয় স্থানের সমাহার। এই নিবন্ধে আমরা গাইবান্ধার উল্লেখযোগ্য কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার: স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন
গাইবান্ধা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। প্রায় ৮ বিঘা জমির ওপর মাটির নিচে নির্মিত এই সেন্টারটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত ছাদ এবং মাটির নিচে বিস্তৃত কাঠামো এই সেন্টারকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারের জন্য এটি ভাড়া দেওয়া হয়, তবে প্রবেশের জন্য পূর্বানুমতি প্রয়োজন।
বালাসী ঘাট: নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধতা
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় অবস্থিত বালাসী ঘাট। বর্ষাকালে নদীর পানিতে থৈ থৈ করা এই ঘাট শীতকালে চরের সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। নদীতে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য এবং নৌকা ভ্রমণের সুযোগ পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া, বালাসী ঘাট থেকে নৌকায় কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে যাওয়া যায়।
পৌর পার্ক: শহরের সবুজ নিঃশ্বাস
গাইবান্ধা সদরেই অবস্থিত পৌর পার্ক একটি পুকুরকে ঘিরে নির্মিত। পুকুরের চারপাশে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের সমারোহ পার্কটিকে মনোরম করে তুলেছে। শান বাঁধানো ঘাট, রঙিন মাছ এবং খোলা আকাশের নিচে বসার ব্যবস্থা এটি সকল বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। এছাড়া, পার্কে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও একটি সৌধও রয়েছে।
এসকেএস ইন: সবুজে ঘেরা আরামদায়ক অবকাশ
গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কলেজ রোডে অবস্থিত এসকেএস ইন একটি দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। ১৯.২ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, কৃত্রিম লেক, সুইমিং পুল, ঝুলন্ত সেতু এবং কিডস জোনসহ নানা সুবিধা রয়েছে। দুটি রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও বুফে সেবা প্রদান করা হয়। প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা ফি নির্ধারিত, এছাড়া এখানে রাতযাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
গড়দিঘী: ঐতিহাসিক পুকুরের সাক্ষী
গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুর হাটে অবস্থিত গড়দিঘী একটি প্রাচীন পুকুর, যা স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীনকালে এটি স্থানীয়দের পানীয় জল ও সেচের প্রধান উৎস ছিল। বর্তমানে এটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ব্রহ্মপুত্র নদীর খনিজ সম্পদ: প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার
গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি পরিচালিত গবেষণায় ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এই খনিজ সম্পদগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।