বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত দিনাজপুর জেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য, মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এই নিবন্ধে আমরা দিনাজপুরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে জানব।
কান্তজীর মন্দির: টেরাকোটার অপূর্ব নিদর্শন
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তরে ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত কান্তজীর মন্দির বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ টেরাকোটা শিল্পের উদাহরণ। ১৭০৪ সালে মহারাজা প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন, যা ১৭৫২ সালে তার পুত্র মহারাজা রামনাথ রায়ের সময়ে সম্পন্ন হয়। মন্দিরের দেয়ালে মহাভারত, রামায়ণ এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা এর স্থাপত্যশৈলীর অনন্যতা প্রকাশ করে।
রামসাগর দিঘি: বাংলাদেশের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট জলাশয়
রামসাগর দিঘি দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম দিঘি। পলাশী যুদ্ধের পূর্বে রাজা রামনাথ রাজ্যের পানির চাহিদা মেটাতে এই দিঘি খনন করেন। বর্তমানে এটি দিনাজপুর পর্যটন বিভাগের অধীনে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
নয়াবাদ মসজিদ: ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার উত্তরে ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত নয়াবাদ মসজিদটি ১৭৯৩ সালে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের শাসনামলে নির্মিত। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন বাংলার ইসলামী স্থাপত্যের চমৎকার উদাহরণ।
সিংড়া জাতীয় উদ্যান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভগনগরে অবস্থিত সিংড়া জাতীয় উদ্যান প্রায় ৮৫৬ একর বনাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ২০১০ সালে এর ৭৫৬ একর জায়গাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি খনন করে দু’ভাগে বিভক্ত হওয়া বনকে একসঙ্গে মেলাতে তৈরি করা হয়েছে সেতু, যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
স্বপ্নপুরী পার্ক: বিনোদনের স্বপ্নরাজ্য
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রায় ৪০০ একর ভূমির উপর অবস্থিত স্বপ্নপুরী পার্ক একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন রাইড, কৃত্রিম লেক, চিড়িয়াখানা এবং পিকনিক স্পট রয়েছে, যা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান।
সীতাকোট বিহার: প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্য
দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সীতাকোট বিহার একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, যা পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫.২৩ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৬৪.১১ মিটার দীর্ঘ। বিহারটিতে মোট ৪১টি প্রায় সমআয়তনের কক্ষ ছিল, যা একটি প্রশস্ত টানা বারান্দার সাথে যুক্ত। এখানে পাহাড়পুর, শালবন বিহার এবং আনন্দ বিহারের মতো ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির ফলক দেখা যায় না, তবে এর আকার-আয়তনের দিক থেকে বগুড়ার ভাসু বিহারের সাথে অনেক মিল রয়েছে।
দিনাজপুর রাজবাড়ী: রাজকীয় স্থাপত্যের সাক্ষী
দিনাজপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দিনাজপুর রাজবাড়ী একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা রাজা দিনাজ বা দিনারাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করা হয়। রাজবাড়ীর স্থাপত্যশৈলী এবং এর প্রাচীনতা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।
চেহেলগাজী মসজিদ ও মাজার: ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান
দিনাজপুর জেলার চেহেলগাজী এলাকায় অবস্থিত চেহেলগাজী মসজিদ ও মাজার একটি প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা। এটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন।